জন্মসূত্রে এদেশের নাগরিকত্বের বৈধতা দেওয়া হয় জন্মসনদের মাধ্যমে। এরপর বয়স আঠারো হলে ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের। এসকল দাপ্তরিক কাজের প্রতি বরাবরই আমাদের একরকমের ভীতি কাজ করে। এখানে ওখানে দৌড়াদৌড়ি, স্পিড মানির নামে হিসাব বহির্ভূত টাকার লেনদেন, ভূলভ্রান্তি, হয়রানি, ভোগান্তি সবকিছুর ভয় মিলিয়ে মোটামুটি হ-য-ব-র-ল একটা অনুভূতি।
একে তো আমি আদার ব্যাপারি, তাছাড়া পায়ের তলায় তিল নেই। বিদেশ যাত্রার ঝক্কি বাঁচিয়ে ভালোই চলছিলো দিনকাল। গেঁড়ো এসে লাগে অন্য জায়গায়। দেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি কোনরকম বৈদেশিক মুদ্রায় পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করতে চায় তাহলে অবশ্যই পাসপোর্ট এ ডলার এন্ডোর্স করতে হবে। শুধুমাত্র এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য পাসপোর্ট করবো করবো করে দিন পেছাচ্ছিলো। এরমধ্যে ই-পাসপোর্ট (ePassport) চালু হলো, তাই আড়মোড়া ভেংগে অনলাইনে আবেদন করেই ফেললাম।
ই-পাসপোর্ট (ePassport) কি
এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২০ টি দেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে। পাসপোর্টধারীর ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য একটি ইলেকট্রনিক চিপ সংযুক্ত থাকে ই-পাসপোর্টে। ব্যবহারকারীর ছবি, আংগুলের ছাপ, চোখের আইরিশ এসকল তথ্য সংরক্ষিত হয় ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এ। এছাড়াও নাম, জন্মতারিখ, মেয়াদসহ অন্যান্য সকল তথ্যাবলী জমা থাকে এই চিপ এ।
পর্যায়ক্রমে বিশ্বের সব এয়ারপোর্টে ই-গেট চালু হলে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে আসা যাওয়া হবে দ্রুত। জায়গায় জায়গায় অফিসারদের কাছে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন থাকবে না, কারন ই-পাসপোর্ট জালিয়াতি করার সুযোগ অনেক কম।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা সমূহ
ব্যবহারকারীর বাড়তি নিরাপত্তা
যেহেতু ব্যবহারকারীর সকল তথ্য যেমন আংগুলের ছাপ, চোখের আইরিশ, ছবি ইত্যাদি ব্যক্তিগত চিহ্নিতকরণ তথ্য কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ এ জমা থাকে তাই চাইলেই কেউ ভুয়া বা জাল পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবে না।
তথ্যের নিরাপত্তা
সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে ব্যবহারকারীর তথ্য থাকে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত। সার্ভারে কোন তথ্য পরিবর্তন হলে সেটা চাইলেই ট্র্যাক করা সম্ভব।
সহজ ব্যবহার
ই-গেট ব্যবহার করে সহজেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।
ই-পাসপোর্টের তথ্য নিরাপত্তা
যেহেতু আমাদের অনেকরকম ব্যবক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করা হবে তাই এসকল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পাসপোর্ট ইস্যুকারী অথরিটির দ্বায়িত্ব। জাতিসংঘের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ কতৃক নির্ধারিত নীতিমালা মেনে ই-পাসপোর্টের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৫ সালে প্রণীত এই নীতিমালা অনুযায়ী,
- ই-পাসপোর্টের তথ্য অনুনোমদিত কাউকে এমনকি চোখ বুলোতেও দেওয়া যাবে না, হস্তান্তরের চিন্তা বাদ।
- মাইক্রোচিপ এবং চিপ রিডারের যোগাযোগের মাঝে কিছুতেই তথ্য অন্য কোথাও সংরক্ষণ বা আঁড়ি পাতা যাবে না। তথ্যের আদান প্রদান হতে হতে সাংকেতিক কোডের মাধ্যমে
- সার্ভারের সাথে যোগাযোগ ও হতে হবে সাংকেতিক কোডের মাধ্যমে যাতে তথ্য চুরি হলেও সেটা ডিকোড করা না যায়
আপনার-আমার, আমাদের সবার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বাধ্য। যদি তারা ব্যার্থ হয় তবে সেটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ই-পাসপোর্টের অসুবিধা সমূহ
ই-পাসপোর্টের এই মাইক্রো চিপ মূলত RFID বা বেতার তরংগ চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিডার ডিভাইস এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এখন হ্যাকার যদি চায় তাহলে পাসপোর্টে থাকা এই তথ্য যেকোন NFC বা স্বল্প দূরত্বের যোগাযোগ সুবিধা সম্বলিত যন্ত্রের সাহায্যে তথ্য চুরি করতেই পারে। উপরে বলেছি আন্তর্জাতিক আইনে সাংকেতিক তথ্য সংরক্ষণ এবং আদান-প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যাতে তথ্য চুরি হলেও ব্যবহার উপযোগি না থাকে। কিন্তু, যদি আপনার তথ্য খুব বেশি দামী হয়, তাহলে সেই সাংকেতিক কোড ভাঙ্গা কখনো অর্থ, কখনো সময় অথবা কখনো এই দুয়ের সমন্বয় হলেই সম্ভব।
আচ্ছা অনেক হলো এসব আলাপ, এবার ধাপে ধাপে বলি কিভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিলাম এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলাম।
অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ
ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলাম এই লিংক থেকে। এখানে গিয়ে বর্তমান জেলা এবং থানার নাম নির্বাচন করলে কোন আঞ্চলিক অফিসে আবেদন করতে হবে তা দেখাবে। এরপর ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট খুলে পরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে সহজেই আবেদন করা যাবে।
আবেদনপত্র পূরণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- নাম ঠিকানা সব জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম-নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।
- নামের আগে পরে মাঝে কোথাও কোন ডট দেওয়ার প্রয়োজন নাই। নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম কোথাও না।
- গিভেন নেম মানে নামের প্রথম অংশ আর সারনেম মানে নামের শেষাংশ।
- ঠিকানা অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই করে দিবেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম-নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী, নাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে সমস্যা হতে পারে।
**১৮ বছরের কম অথবা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের কেউ ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে পারবেন না, সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে পারবেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিচে দেওয়া স্ক্রিনশটের মতো একটা ইমেল পাবেনঃ

এই ইমেইলটা আপনার স্প্যাম ফোল্ডারে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি কারন ওরা একটা নন এনক্রিপ্টেড ইমেইল সার্ভার ক্লায়েন্ট থেকে ইমেইল করে থাকে, যেটা কখনোই কাম্য নয়।
আমি অনলাইনে পেমেন্ট করেছিলাম, তাই আমার পেমেন্ট স্ট্যাটাস সহ ইমেইল এসেছে। আপনি যদি পেমেন্ট না করেন তাহলে হয়তো পেমেন্ট স্ট্যাটাস বকেয়া দেখাবে।
আবেদনপত্র প্রিন্ট করার সময় খেয়াল রাখবেন বারকোড যাতে ঠিকভাবে আসে। ডাউনলোড করা আবেদনপত্র প্রিন্ট করলে যদি বারকোড না আসে তাহলে ইমেইলে পাওয়া আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করলে অনেক সময় সমস্যার সমাধান হয়। প্রিন্ট সাধারণ A4 সাইজের কাগজে করা যাবে, সমস্যা হবে না।
আবেদনপত্র পূরণের সময় ভুল করে ফেললে ঘাবড়ে যাবেন না। যদি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরনো পাসপোর্ট অথবা জন্ম-নিবন্ধন সনদের তথ্য সঠিক থাকে তাহলে যেদিন বায়োমট্রিক (ছবি, আংগুলের ছাপ, চোখের আইরিশ) জমা দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যাবেন, সেদিন একটু আগে আগে গিয়ে সংশোধন করে নিতে পারবেন।
যদি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরনো পাসপোর্ট অথবা জন্ম-নিবন্ধন সনদে কোন ভুল থাকে তাহলে আগে সেগুলোর ভুল সংশোধন করে নিতে হবে, অন্যথায় আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে না।
পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করা
সাধারণ ই-পাসপোর্টের ফি তালিকা নিচের টেবিলে দেওয়া হলোঃ
**উক্ত ফি এর সাথে ১৫% হারে ভ্যাট দিতে হবে।
আমি অনলাইনে ফি পরিশোধ করেছিলাম। ফি পরিশোধের পর ই চালান ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে সার্চ করতেই চালান চলে আসে। নিচের স্ক্রিণশট দেখুনঃ

এখান থেকে বিস্তারিত লেখায় ক্লিক করে চালান প্রিন্ট করার একটি বাটন পাই, সেই বাটনে ক্লিক করে চালানটি প্রিন্ট করে নিয়েছিলাম। প্রিন্ট করার সময় বারকোড যাতে পরিষ্কারভাবে আসে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া আপনি চাইলে সোনালী ব্যাংকের ই সেবা এপ ব্যবহার করে ফি জমা দিতে পারবেন।

এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া
এবার আপনি আপনার ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইট একাউন্টে ঢুকে এপয়েন্টমেন্ট শিডিউলের অপশন পাবেন। এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পর এপ্লিকেশন সামারিটি প্রিন্ট করে নিবেন। এটা ছাড়া আপনাকে লাইনেই দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।

সামারি প্রিন্ট করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন বারকোড পরিষ্কারভাবে আসে। সাধারণ A4 সাইজের কাগজে প্রিন্ট করলে কোন সমস্যা হবে না।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নেওয়া
- এপ্লিকেশন সামারির প্রিন্টেড কপি, এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক
- পূরণকৃত অনলাইন এপ্লিকেশনের প্রিন্টেড কপি, এটাও সবার জন্য বাধ্যতামূলক। প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে উভয় পৃষ্ঠায় করার নির্দেশনা থাকলেও সিংগেল সাইডে প্রিন্ট করা নিয়ে সমস্যা করেনি। আমি সিংগেল সাইডেড প্রিন্টই জমা দিয়েছি। এই আবেদনপত্রের শেষে যেদিন এপয়েন্টমেন্ট সেদিনের তারিখ বসান, ডানপাশের ঘরে স্বাক্ষর দিন। স্বাক্ষর আর তারিখ অফিসিয়ালদের সামনে বসে দেওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
- পেমেন্ট স্লিপ। আবেদন পত্রের ডানপাশে আঠা দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। আমি যেহেতু অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মধ্যমে ফি পরিশোধ করেছিলাম তাই এটা নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি আমার।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, সবার জন্য বাধ্যতামূলক, না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ, জন্মসনদের ক্ষেত্রে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার আগে অনলাইন ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে রিজিওনাল অফিস থেকে। যেদিন এপয়েন্টমেন্ট সেদিনই করতে পারবেন। একটু আগে আগে গেলেই হবে।
কোন কিছুই স্ট্যাপলার দিয়ে আটকানোর প্রয়োজন হয়নি আমার। একদম শুরুতে যেখানে সিরিয়াল দেওয়া হয় সেখানে সব গুছিয়ে স্ট্যাপল করে দিয়েছিলো। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলবো একটু পর।
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়া আরো যেসব কাগজ লাগবে তা হলোঃ
- প্রাক পুলিশ ভেরিফিকেশন, যদি জরুরি আবেদন হয় সেক্ষেত্রে, অবশ্যই লাগবে
- আগের পাসপোর্টের ফটোকপি, যদি থাকে, অবশ্যই লাগবে।
- নিকাহ নামার দলিল, শুধুমাত্র বিবাহিতদের জন্য
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড, এটা অপশনাল, লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে
- চাকুরির আইডি কার্ড এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, বেসরকারি চাকুরীজিবিদের ক্ষেত্রে, এটা অপশনাল, লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে
- ব্যবসায়িক দলিল, যেমনঃ ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে, এটা অপশনাল, লাগতেও পারে, না-ও লাগতে পারে
- ইউটিলিটি ( গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ) বিলের কপি, এটাও অপশনাল, লাগতেও পারে, না-ও লাগতে পারে

এছাড়াও সেকল কাগজপত্রের মূলসনদ অবশ্যই সাথে নিতে হবে সেগুলো হলোঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলসনদ
- আগের পাসপোর্ট, যদি থাকে, অবশ্যই লাগবে।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ, ১৮ বছরের নিচে হলে, অবশ্যই অনলাইনে ভেরিফিকেশন যোগ্য হতে হবে এবং মূলকপি দেখানো লাগবে।
- অফিশিয়াল পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে সরকারী আদেশপত্র (GO – Government Order) এবং বিনা দাবি প্রত্যয়নপত্র (NOC – No Objection Certificate) অবশ্যই অনলাইনে ভেরিফিকেশন যোগ্য হতে হবে এবং মূলকপি জমা দিতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী ePassport Bangladesh এর জন্য কোন কাগজপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন নেই।
আপনাকে কোন ছবি নিতে হবে না, বায়োমেট্রিক নেওয়ার সময় আপনার ছবি তুলে নেওয়া হবে। ছবি বিষয়ক বিস্তারিত নির্দেশনা নিচে দেওয়া আছে।

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হাজিরা দেওয়া
নির্দিষ্ট দিনে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে চলে যাবেন। আপনার এপয়েন্টমেন্ট এ যে সময় দেওয়া সেটা আসলে তেমন কার্যকর না। আপনি অন্তত ৪-৬ ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে যাবেন। সাথে খাবার এবং পানি রাখলে ভালো। দুপুর একটার পর আবেদনপত্র জমা নেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই আপনার এপয়েন্টমেন্ট শিডিউল বিকেল ৩ টায় নেওয়া হলেও দুপুর একটার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এরপর আবেদন পত্র নিবে কি নিবে না সেটা নির্ভর করে কাউন্টারে থাকা উপপরিচালক মহোদয়দের মর্জির উপর।

এন্ট্রি সিরিয়াল নেওয়া
গেট দিয়ে প্রবেশ করে লাইনে দাঁড়ান, নারী-পুরুষের পৃথক লাইন। অস্থির হবেন না। মাথার উপর ফ্যান আছে, বাতাস খান। এই লাইন ধরে গেলে কাউন্টারে কাগজপত্র যাচাই করে গুছিয়ে স্ট্যাপল করে সিরিয়াল নাম্বার দেওয়া হবে। পেমেন্ট স্লিপ যদি আঠা দিয়ে সংযুক্ত না করেন তাহলে এ পর্যায়ে সেটা করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। আঠা পাশেই পাওয়া যাবে।
সব ঠিক থাকলে আপনার আবেদনপত্রের উপর ছবিতে দেখানো সিলের মতো করে সিরিয়াল নাম্বার দেওয়া হবে
লাইনের এই জায়গায় বিখ্যাত দালালেরা আপনাকে টার্গেট করতে পারে। দালালদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলবো আরেকটু পর। কতো টাকা লাগবে, কিভাবে দামদর করতে হবে, চিনবেন কিভাবে, সবিস্তারে বলবো।

আবেদনপত্র জমা দেওয়া
সিরিয়াল নেওয়ার পর আমাকে বলা হয়েছিলো ১০৩ নম্বর রুমে যেতে। রুম না বলে হলরুম বলা ভালো। মাথার উপর চারটা ফ্যানের তিনটা নষ্ট। একটা এসি আছে, চলে কিনা বোঝা দায়। গোঁদের উপর বিষফোঁড়া, মাথার উপর সাউন্ড সিস্টেমে একঘেঁয়ে নির্দেশনা বাজতেই থাকে।
বিশাল লম্বা পেঁচানো লাইন। নারী পুরুষের পৃথক সারি। এগুচ্ছিলো শ্লথের ন্যায়। প্রায় ঘন্টাখানেক দাঁড়ানোর পর আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পাই।
সকল প্রয়োজনীয় সনদের মূলকপিসহ এবং স্বাক্ষরিত আবেদন কাউন্টারে থাকা উপপরিচালক মহোদয় এর হাতে দেওয়ার পর তিনি যাচাই বাছাই করে আবেদন পত্র গ্রহণ করেন। এবং বলে দেন ৩০৮ নম্বর কক্ষে যেতে।

আবার সিরিয়াল নেওয়া
৩০৮ নাম্বার মূলত কোন কক্ষ না, এটা কক্ষের বাইরের সিঁড়ির প্যাসেজ। এখানে বায়োমেট্রিক অর্থাৎ ছবি, চোখের আইরিশ, হাতের ছাপ ইত্যাদি জমা দেওয়ার জন্য সিরিয়াল নিতে হবে
আমার সিরিয়াল হলো দুইশো এর উপর, তখনো জানি না কতোজনের আগে বা পরে আমি। বলা হলো ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে

বায়োমেট্রিক জমা দেওয়া
৪০৩ নম্বর কক্ষের সামনে এসে দেখি লোকে লোকারণ্য। রুমের সামনের সিঁড়িতে, চেয়ারে কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই।
বসে থাকা ভদ্রলোকদের কাছে জানতে চাই কতো নাম্বার সিরিয়াল চলে, পাল্টা প্রশ্ন, আপনার কতো? শুনে পাশে থাকা এক আনসার সদস্য বলেন, ৫ টার পর আসেন। ঘড়িতে তখন তিনটা বেজে পনেরো-কুড়ি মিনিট।
কোনমতে একটা সিট ম্যানেজ করে বসে রইলাম পাক্কা দুই ঘন্টা। শেষেরদিকে এসে কর্মচারীরাও অতিষ্ট। ওদিকে মহিলাদের সংখ্যা তূলনামূলক কম হওয়ায় ওদিকতা ফাঁকা হয়ে গেলো। দশ-পাঁচজন করে ডেকে নিয়ে গেলো ৫০৩ নম্বর রুমে, যেখানে মহিলাদের বায়োমেট্রিক নেওয়া হচ্ছিলো।
কিছুক্ষন পর আমাকেও ডাকা হলো, ঢুকে গেলাম বায়োমেট্রিক দিতে। এখানেও রুমের ভেতর সিরিয়াল। তিনজনের পর আমি।
অবশেষে সুযোগ হলো। প্রথমে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর নেওয়া হলো। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে স্বাক্ষর দেওয়া যাবে, জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মেলার প্রয়োজন নেই। এরপর চোখ স্ক্যান করা হলো, সবশেষে দুই হাতের দশ আঙ্গুলের ছাপ, প্রথমে ডান হাতের চার আংগুল, পরে বাম হাতের চার আংগুল এবং সবশেষে দুই হাতের বুড়ো আংগুল একসাথে।
এসব শেষ হলে ডেলিভারি স্লিপ আমাকে দেওয়া হলো সব ঠিক আছে কিনা মিলিয়ে দেখার জন্য। ডেলিভারি স্লিপে কোন ভুল থেকে গেলে পাসপোর্ট এ ভুল আসবে। তাই এক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সাথে সব মিলিয়ে নিতে হবে। সব ঠিক থাকলে এবং মেলানো হলে পরে কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ডেলিভারি স্লিপ বুঝে নিলে সেদিনের মতো কাজ শেষ।
পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন
এরপর অপেক্ষা পুলিশ ভেরিফিকেশনের। যেহেতু আমার স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন তাই ভেরিফিকেশন হতে হবে দুই জায়গায়। এখানে কিভাবে কি হয় সেটা এই ব্লগে পরে এড করে নিবো। এরপর আসবে পাসপোর্ট ডেলিভারি নেওয়া, সেদিনের অভিজ্ঞতাও বিস্তারিত বলবো।
কোন প্রশ্ন, মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। এই লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে উৎসাহ জানান। প্রকাশের সাথে সাথে পরবর্তী আপডেট পেতে ইমেইল নোটিফিকেশন চালু করে রাখতে পারেন।
জানতে চান শাওমি কিভাবে আজকের শাওমি হলো? পড়ুন আমার ব্লগ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

অভিন্ন তথ্য
আপনার যদি আগের পাসপোর্ট থাকে তাহলে নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আগের পাসপোর্টের সাথে নতুন আবেদনপত্রের নাম ঠিকানা সব মিলতে হবে। যদি কিছু পরিবর্তন করতে হয় তাহলে অবশ্যই সংশোধন করে আবেদন জমা দিতে হবে।

পোষাক নির্বাচন
পাসপোর্টের ছবি তোলার ক্ষেত্রে সাদা এবং হাল্কা রঙ এর পোষাক পরিহার করতে হবে। এছাড়া চেক জামা, খুব বেশি ঘন ছাপ ইত্যাদি পরিহার করাই শ্রেয়। খুব ভালো হয় যেকোন গাড় রঙ এর একরঙ্গা জামা গায়ে দিলে।

আয়না
ছবি তুলতে ঢুকবেন, আপনাকে কেমন লাগছে বুঝতে পারছেন না? সমস্যা নেই। হলরুমের দুইপাশের দেয়ালে দু’টো আয়না ফিট করা আছে। চুল, ঠিক করে, মুখে হাল্কা মেকাপ ঘষে ঢুকে পড়ুন ছবি তুলতে।

দালাল নির্বাচন
পাসপোর্টের কাজে গেলে আপনি আমি দালালদের চিনবো না এটাই স্বাভাবিক। তো এই সমস্যার সমাধান, অফিসের ঠিক বাইরের দেয়ালে, দালালদের ছবি টাংগিয়ে রাখা। দেয়ালে ছবি নেই এমন কারো সাথে লেনদেন করে ঠকবেন না যেন!
লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ হয়তো আপনাকে বলবে হাজার তিনেক টাকা হলে অনায়াসে কাজ করে ফেলতে পারবেন। সময় লাগবে না। আগে ঠান্ডা মাথায় বুঝুন তিন হাজার টাকার ভেতর কি কি।
যদি পুরো পাসপোর্টের কাজ কমপ্লিট করে দেয় তাহলে এক কথা। যদি শুধু সেদিনের লাইন পার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
অথবা কেউ এসে বলতে পারে শুধু সেদিনের কাজ করে দিবে, বিনিময়ে হাজারখানেক টাকা দিতে হবে।
আপনি বুদ্ধিমান হলে এদের কারো প্রস্তাবেই রাজী হবেন না। কেন? বুঝিয়ে বলছি।
প্রথমত, আমি কিছুতেই আমার সব কগজপত্র অচেনা অপরিচিত কারো হাতে তুলে দিবো না, যেখানে এখন এসব দিয়ে জায়গা-জমি পর্যন্ত বেদখল করে ফেলা সম্ভব
দ্বিতীয়ত, যেখানে সবকিছু অনলাইনে হয়, আপনি কষ্ট করে সব প্রস্তুত করে গেলেন, এখন দালাল ধরে কেন অহেতুক টাকা দিবেন? কিছুটা সময় বাঁচাতে? তাড়াহুড়োয় ভুল হলে কিন্তু সময়ের কূল পাওয়া যাবে না।
তৃতীয়ত, আমরা যদি দালাল দিয়ে কাজ করানো বন্ধ না করি তাহলে দালালদের হাত থেকে কখনোই নিস্তার পাবো না। যার যার জায়গা থেকে নিজেদের সচেতন হতে হবে।

প্রিন্ট এবং ফটোকপি
প্রিন্ট এবং ফটোকপি যা কিছু করা প্রয়োজন তার জন্য পাসপোর্ট অফিসের সামনের দোকানগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। দালালদের পাশাপাশি প্রতারকের অভাব নেই।
আপনার ডকুমেন্ট থেকে নাম্বার নিয়ে ভূয়া পুলিশ সেজে ফোনে টাকা চাইতে পারে। অথবা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জালিয়াতির কাজে ব্যবহার করতে পারে। নিদেনপক্ষে আপনার জাতীয় পরিচয় ব্যবহার করে একটি সীম কার্ড সংগ্রহ করে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে।
এসব বিষয় মাথায় রেখে ঝক্কি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
প্রিন্ট বা ফটোকপি যদি নষ্ট হয়, সেটা যত্রতত্র ফেলবেন না। সাথে করে বাসায় নিয়ে আসবেন। এগুলো সংগ্রহ করেও আপনার ক্ষতিসাধন সম্ভব।
ePassport নিয়ে যেকোন মতামত বা প্রশ্ন জানান কমেন্টে। লেখাটি শেয়ার করে উৎসাহ জানান। প্রকাশের সাথে সাথে পরবর্তী আপডেট পেতে ইমেইল নোটিফিকেশন চালু করে রাখুন।
আরো পড়ুনঃ
- 1KShares
1K
ভাইয়া, আমার আগের MRP পাসপোর্ট এ Given name- MOHAMMAD, Surname- SAWKATUL ISLAM দেয়া। আমার NID name- MD. SAWKATUL ISLAM. আমি কি E-passport আবেদনে Given name- MD. লিখে আবেদন করতে পারব নাকি আগের MRP পাসপোর্ট এর সাথে মিল রেখে আবেদন করতে হবে।
১. আমার ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি বাকা। NID করা সময় যখন আঙ্গুলের ছাপ নিছিলো, তখন কনিষ্ঠা আঙ্গুল বাদে বাকি ৯টি আঙ্গুলের ছাপ নিছিলো। এটা কি কোন সমস্যা হবে?
২. আমাদের বাড়িতে কারেন্ট আসছে ৩ মাসের মতো হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ইলেক্ট্রিসিটি বিল আসে নায়। বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ছাড়া e-passport করতে পারবো?
১. এই সমস্যার সমাধান RPO এর অফিসাররা করে দিবেন, উনারা বুঝে ব্যবস্থা নিবেন।
২. পানি অথবা গ্যাস বিল দিয়েও পারবেন। যদি নিজ বাড়ি হয় তাহলে এলাকার কমিশনার/চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট থাকলে সমস্যা হবে না
ভাই, আমি আইডি কার্ড অনলাইন থাকি তুলছি, সিলেট ই পার্সপোট এর জন্য গেলাম তারা বলে এটা নাকি তাদের সার্ভারে শো করতে ছে না, বলছে নির্বাচন অফিস থেকে আইডি কার্ড আনতে এখন কি করব
সার্ভারে সমস্যা হলে কিছু করার নাই, অন্যদিন চেষ্টা করতে হবে অথবা NID তুলে যেতে হবে
প্রশ্ন?
আমার MRP পাসপোটে আমার বাবার নাম।
আর মায়ের নাম।
soyed ahammad
shahida begum
দেওয়া আছে আমি ই পাসপোটে আবেদন করবো এখন জানতে চাচ্ছি
বাবার আর মায়ের আইডি কাডে এভাবে আছে
Sayed ahammed rari
Shaida begum
বাবা মায়ের নামে কোনো সমস্যা হবে?
আগে MRP তে বাবা মায়ের নাম সংশোধন করে এরপর আবেদন করতে হবে
vaiya verification kivabe hobe ?? Permanent & Present address different hole ??
দুই জায়গায় ভেরিফিকেশন হবে আলাদা আলাদা
ঢাকার বাইরে থেকেও কি একই পদ্ধতিতে পাসপোর্ট করা যাবে? আমি ফেনী সদরে থাকি। আর আমার NID তে একটা ভুল ইনফো আছে। আমার প্লেস অফ বার্থ ওরা ভুল করে ফেনীর যায়গায় ফরিদপুর দিয়ে দিয়েছে। তবে ঠিকানা ঠিক আছে। এই জন্য কি কোন সমস্যা হতে পারে?
জ্বী, করা যাবে।
আগে জন্ম নিবন্ধন কারেকশন করে পরে এপ্লাই করেন।
Bhai, amar nid er meyad shesh,,ekhon ki ami online copy laminating kore e passport korte parbo? TIA!
জ্বী, অনলাইন কপি দিয়ে করতে পারবেন। এপয়েন্টমেন্ট এর দিন প্রিন্ট নিয়ে যাবেন। এরপর ওখানে অনলাইনে ভেরিফিকেশন করতে হবে। যথা নিয়মে আবেদন করুন। কোন সমস্যা হবে না।